মাসিক বজ্র|| বিশেষ সংখ্যা|| শাহরে রমাজান-২০১৯|| ভ্রমন ||


ভ্রমনস্মৃতি

            —খোরশেদ আলম খোকন


[চট্টগ্রাম ভ্রমনের একাংশ ]

ফ্রেন্ড’স টাওয়ার থেকে বিকাল চারটায় রওনা হলাম চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনাধীন চান্দগাঁও থানার উদ্দেশ্যে। সেখানে 'কলম সাহিত্য সংসদ লন্ডন' বাংলাদেশ চ্যাপ্টার -এর কো-অর্ডিনেটর জনাব মো. সাদেক উজ্ জামান চৌধুরী প্রাণপ্রিয় সাদেক ভাইয়ের গ্রামের বাড়িতে। রাস্তার দু'ধারে বেশ সুন্দর মনোরম পরিবেশ। চলতে চলতে গাড়ী গিয়ে থামলো এক বিস্কিটের দোকানে। হাইওয়ে থেকে একটু পেছনে তিন রাস্তার মোড়েই দোকানটি। নাম ফুলকলি। গুণে মানে অনেক বড় এক বেকারি দোকান। এখানে গাড়ী পার্কিং এর উদ্দেশ্য হলো_ সাদেক ভাইয়ের মেয়ের জন্য একটু চকলেট বিস্কুট নিতে হবে। পাশেই একটা চা স্টল। চা স্টল বললে মনে হয় ভুল বলা হবে। কেননা, দেখতে অনেকটা রেস্টুরেন্টের মতই। রেস্টুরেন্টের সামনের উপর কর্ণারে এক পপার্শে ছোট একটি বিলবোর্ডে নজর পড়তেই সবাই হেসে উঠল। বিলবোর্ডে লেখা 'গরুর দুধের চা'। সবাই হেসে  উঠার কারণ হলো, 'ধ' বর্ণের মত করে 'র' বর্ণের হ্রস-কার (ু) -এর কান ধরে রাগের মাথায় কেউ উল্টা দিকে মুচরিয়ে দিয়েছে। হয়তো বেচারাকে ধোকায় ফেলে গরুর দুধের বদলে রামছাগলের দুধ চা খেতে দিয়েছিল। তাই এমনটি ঘটিয়েছে। সময়ের অভাবে ওটা নিয়ে আর বেশিক্ষণ ভাবা হলোনা। গাড়ি যতই সামনের দিকে ছুটে চলছে, ততই গ্রামের সুনিবির পরিবেশ আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরছে যেন! কখনো কখনো রাস্তার দু'ধারে খোলা সবুজ মাঠ। গাছগাছালির প্রাকৃতিক দৃশ্য। যেতে যেতে ঘনিয়ে আসছে বিকেলের সৌন্দর্যরূপ। সেই সৌন্দর্য থেকে যতটা আঁচ করতে পেরেছি, তাতে সন্ধ্যার পরিবেশ আমাদের সত্যি আরও পাগল বানিয়ে ছাড়বে। Hasan Mahmud ততক্ষণে গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠো পথ ধরে ঠিকঠাক পৌছে গেলাম আমাদের গন্তব্যে। আহ্! কী অপরূপ ছায়াঘেরা দোতলা বাড়ি। সন্ধ্যার গোধূলি নেমে এসে পড়েছে বাড়িটির ঠিক পশ্চিমা বেলকুনির পাশে। সাদেক ভাই আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়ে অতিথিশালায় নিয়ে গিয়ে বসালেন। দেয়ালে ঝুলানো; তাকের উপর সযত্নে রাখা ক্রেস্ট আর সার্টিফিকেট দেখতে দেখতে কেটে গেল অনেকটা সময়। সাদেক ভাইয়ের সম্মানিত পিতা যে একজন স্বদেশপ্রেমী সৎসাহসী বিচক্ষণ ব্যক্তি সে’টা আর কারও বোঝার বাকি রইল না। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেদিন তাঁকে স্বচক্ষে একনজর দেখতে পেলাম না। কিছুক্ষণ পর সাদেক ভাই একজন ভদ্রলোককে ঘরে এনে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। নাম মো. নুরুল ইসলাম। সাদেক ভাইয়ের সহকর্মী। কথাগুলো বেশ মাধুর্য স্বভাবের। দেখতে অনেকটা 'নূর' -এর মত বললে খুব একটা বেশি বলা হবেনা। সুন্দর স্মার্ট চেহারা। সহজ সরল তো বটেই। ইসলামি জীবনবোধের এক অভিব্যক্তি। সাদেক ভাইয়ের বন্ধুবর বলে কথা। পরিচয় বিনিময় হবার পর ড. নজরুল ইসলাম হাবিবী স্যার তাঁর জীবনদর্শন নিয়ে কিছুক্ষণ আলোচনা করছিলেন। সেখানে প্রিয় স্যারের ছাত্র হবার সৌভাগ্য স্বরূপ "স্যারের 'অ' তে অক্সফোর্ড" স্মৃতিচারণ লেখার প্রশংসায় কিছু কথা সংক্ষেপে তুলে ধরলেন সাদেক ভাই। তাছাড়া 'কলম সাহিত্য সংসদ লন্ডন' -এর অগ্রগতির কিছু দিকনির্দেশনা মূলক বক্তব্যে আলোচনা প্রায় শেষের দিকে...

তারপর শুরু হলো আপ্যায়ন পর্ব। নানা আয়োজনে ভরে গেল সামনের টেবিল।যার বর্ণনা অল্প সময়ে সম্ভব নয়। তবে সামান্য কথায় বলে রাখি, এই আপ্যায়ন আমার সারাজীবন মনে থাকবে। চা আড্ডার মধ্যদিয়ে নেমে এলো সন্ধ্যা। সাদেক ভাই আমাদের সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন দোতলার ছাদে। পুরাতন বাশবনে পাখিদের কিচিরমিচির। পাশের আমতলা থেকে ভেসে আসছে মুকুলের ম—ম গন্ধ। দক্ষিণা বাতাসের আনন্দে নেচে উঠছে বৃক্ষের পাতাগুলো। ছাদের গা ঘেসে দাঁড়িয়ে আছে সুন্দরী নারিকেল গাছটি। একটু হাত বাড়ালেই ধরা দেয় সিঁদুর রঙের কচি ডাবগুলো। আমরা যেটাকে সিন্ধি বলে চিনি। স্যার দেখে মুগ্ধ হয়েছিল, অনেক প্রশংসা করেছিল গাছটির। সবমিলিয়ে এক প্রাকৃতিক গোধূলি সন্ধ্যায় কেটে গেল সময়টা। ধীরে ধীরে জমাট বাধা অন্ধকার নেমে আসছে শান্ত পৃথিবীর বুকে।

আলহামদুলিল্লাহ! সাদেক ভাই অনেক সুখে আছেন। তা এতক্ষণে আমরা আয়ত্ত করতে পেরেছি। ততক্ষণে আকাশের চাঁদ এসে স্যারের কোল আলোকিত করে বসেছে; হেসে উঠেছে আকাশের  তারকারাজি। সাদেক ভাই এসে বলল, ওটা আমার মিষ্টি মা’মণি। স্যার, একটু দোয়া করে দিবেন! সাধুবাদ জানানোর মাধ্যমে বিদায়ের ধ্বনি বেজে উঠলো। সাদেক ভাইয়ের প্রাইভেট কারে রওনা হলাম কামালপাড়া বাজারের দিকে...
                                  চলবে...

Comments