মাসিক বজ্র || আগষ্ট-২০১৯ || ঈদুল আযহা সংখ্যা || ছোটগল্প - কুরবানী ||গল্পকার মো. জাবেদ আলী
কুরবানী
--সোহেল । বাড়ির মালিকের বড় ছেলে মুন্না । বিলেত ফেরত । সোহেল ডাক দেয় । সোহেল এ বাড়ির চাকর । খুব অনুগত । বছরে দু'বার বাড়ি যায় । দুই ঈদে । বাড়ির মালেকীন বলেছে আর কয়েকদিন পরেই ঈদ । আইতাছি স্যার,বলেই সে আবার গুণতে শুরু করে । রবি,শণি,শুক্র---কত তারিখে কোরবানী? সাহেব আর মেমসাহেবে বলাবলি করেছিল নয় তারিখে । ঈশ আর মাত্র নয় দিন ।
-- সোহেল,কানে কিম শুনিস ? ডাকছি কানে আসে না ,বলেই মুন্না তার কান দুটো ধরে এমন এক মোচর দিল যে,কান দুটো গরম হয়ে ভোঁ ভোঁ করতে লাগল ।
-- কানে কথা যায় না ।
-- জি স্যার,মাফ কইরা দেন ।
-- কি করছিলি হ্যা ।
-- ঈদের আর কয়দিন বাকি,হিসেব করছিলাম ।
একটা চড় দিয়ে মুন্না বলে,
-- যা আমার শার্ট আর জুতো নিয়ে আয় । সোহেল দাঁড়িয়ে থাকে । এইটুকু ভুলে মাইর দিতে হবে ?
-- এই বেটা কথা কানে গেছে ?
-- জি,বলে সোহেল জুতো আর শার্ট আনতে যায় ।
-- তাড়াতাড়ি নিয়ে আয় । মুন্না হাত ঘড়িতে সময় দেখে চমকে ওঠে । সময় এক্কেবারে নেই ।
ইসরে ! বাসার এক একটা চাকর যেন মন্ত্রীপুত্র যেন । আবার হাঁক দেয় ।
-- সোহেল,
তড়িঘড়ি করে জুতো আনতে গিয়ে সোহেল,সিড়িতে পড়ে গিয়েছে । হাঁটুর চামড়া ওঠে গেছে । ক্ষত স্থান থেকে দর দর করে রক্ত ঝরে পড়ছে ।
মুন্না জুতো জোড়া পায়ে দিয়ে হন হন করে বাইরে বেড়িয়ে গেল ।
সোহেল আবার ভাবতে বসল । কতদিন । নয় দিন । বাড়ি যাওয়ার জন্য মনটা কেমন ছটপট করছে ।আবার গুণতে থাকে । শণি ,রবি,সোম ----
কবে যে কোরবানী আসবে । এবার বাড়ি গেলে অনেক মজা হবে । মায়ের রান্না ! খুব মজা । এ বাড়িতে বড় বড় মাছ আনে । সোহেল কুটে । ধুয়ে দেয় ।
রাঁধুনি খালা রেধে দেয় । সোহেলের ভাগে পড়ে কাটা-কুটো । মা হলে কি এমনে খাওয়াত । সব তরকারী পাতে তুলে দিত । কাঁটা-কুটে দিত । খাইয়ে দিত । এবাড়ির মানুষ গুলো অদ্ভুত । সাহেবের ছোট মেয়েটা পুতুলের মতো সুন্দরী । খুব ভালো লাগে তার । ব্যবহার একদম ভালো না । সময়ে-অসময়ে খালি খালি মারে ।
-- আপা আমারে মারেন ক্যান ?
-- ইচ্ছা হয় তাই মারি ।
-- আপনার ইচ্ছাটারে বদল করা যায় না ।
-- যায় ।
-- তয় করেন না ক্যান ?
-- এই যে করলাম,বলেই টাস করে একটা চড় মারে সোহেলের গালে। সাথে ফকিরের বাচ্চা বলে একটা বিশ্রি গালি ।
এই ঢাকা শহরে সোহেলের মতো অনেকে চাকরের কাজ করে । করিম,কালু,ময়না,মোবারক সহ আরো অনেকে । বাজার করতে গেলে কথা হয় । বাড়ির মালিকেরা বড় নিষ্ঠুর । হাত-পা বেঁধে মার দেয় । শরীরে গরম পানি ঢেলে দেয় । গরম খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দেয় । অপমান করে । ময়না বলে,
-- আমাদের বাড়ির মালিক খুব ভালো। খালাম্মার বয়স কম । আমাকে খুব আদর করে । বলেন আমাদেরকে এক হতে হবে ।
-- তাই নাকি ,কালু বলে ।
-- হ্যারে কালু । খালা আম্মা বলে যারা মার খায়,তারা বোকা আর কাপুরুষ।
-- মার না খেলে কি খামু ? সোহেল বলে ।
-- আরে না,এর প্রতিবাদ করতে হবে । পত্রিকার হেড লাইনের খবর পালটে যাবে । বাড়ির চাকরকে অত্যাচার করতে গিয়ে এলাকার সকল চাকর-চাকরানীর হাতে মার খেয়েছে বাড়ির মালিক । সোহেলের মনে হয় সে এই দলের নেতা । এ সব অন্যায় সে মানবে না । এবার কুরবানীতে বাড়ি গেলে,যখন ফিরে আসবে তখন একটা মিটিং ডাকবে । মায়ের কথা মনে হলে মন খারাপ হয়ে যায় । খালি মাকে দেখতে মন চায় । স্বপ্নেও মাকে দেখে ।
রাতের বেলা । মুন্না বাসায় এসে দরজা ধাক্কাতে থাকে । সোহেল দরজা খোলে দেয়।
-- এই চাকরের বাচ্চা দরজা খুলতে দেরি হল কেন ?
-- ভাই জান ,বিনা দোষে গালি দিবেন না ,আমি তো দেরি করি নাই ।
একটা চড় বসিয়ে দেয় সোহেলের গালে ।
-- মুখে মুখে তর্ক , ছোট লোকের বাচ্চা ।
চোখে সর্ষের ফুল দেখে চাকর ছেলেটি । একটু পড়ে সাহেব,সাহেবের মেয়ে,আর মেমসাহেব বাসায় ঢোকেন । ছোট মেয়েটির হাতে সোনার মেডেল। সাহেবের গলায় ফুলের মালা ।সাহেব ও মুন্না মদ খেয়েছে । সোহেলের বমি আসে মদের বিকট গন্ধে । ডায়নিং রুমে বসে তারা গল্প করছে । সাহেব বললেন,
-- আমাদের মুন্নার বক্তব্য খুব ভালো হয়েছে,
-- আর,আমার মেয়ের গান--সব শিশুকে দিতে হবে বাঁচার অধিকার । বললেন,মালেকীন ।
-- শুধু তোমার মেয়ে । বলে হেসে উঠল সাহেব । আচ্ছা ,সোহেল কৈ । তাকে ডাক । আগামী কাল টি,ভি চ্যানেলের লোক আসবে । কি কি বলতে হবে ? সোহেল কে শিখিয়ে দিই । ডাক তাকে । সোহেল,এই সোহেল।
-- জি সাহেব,আসছি ।
-- আজকে টি,ভি দেখতে বলেছিলাম,দেখেছ ?
-- জি সাহেব,আপামনি গান গাচ্ছিল-সব শিশুকে দিতে হবে বাঁচার অধিকার।
-- আর কিছু দেখনি ।
-- জি সাহেব,আপনি ,খালাম্মা,মুন্নাভাই অনেক কথা কইছেন ।
-- তাহলে শোনো,আগামীকাল টি,ভি চ্যানেলের লোক আসবে,
-- জি ।
-- তুমি তাদের সামনে সাক্ষাতকার দিবে,বলবে আমরা খুব ভালো মানুষ ।
-- মুন্না ভাই,হেথে যে খালি খালি মারে আর বকে ।
-- বলবে মুন্না ভাই খুব ভালো । তোমাকে আদর করে ।
-- হ আদর করে না ছাই । অখনেই একটা চড় দিছে । আর আপামনি ।
-- বলবে সে তোমার বান্ধবীর মতো ।
-- ওরে আল্লাহ এতবড় মিথ্যে কথা । আমি বলতে পারমুনা । সাহেব ধমক দেয় । না বললে তুমি আগামি পরশু বাড়ি যেতে পারবে না ।
একথা শোনে সোহেল ,ধীরে সে জায়গা ত্যগ করে । তারমন ছটপট করতে থাকে । এবাড়ি ছেড়ে পালাতে হবে । না হলে এরা তাকে আর বাড়ি যেতে দিবে না । কাপড়-চোপর পোটলা বাঁধে । সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে । রাতের আঁধারে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায় সে । কুরবানীর দিন বাড়ি যাবে । মায়ের সাথে দেখা হবে । সোহেল কে কোথাও না পেয়ে সাহেব ও সাহেবের ছেলে খুজতে বের হয়েছে । চেনা পথে ছাড়া অচেনা পথে সে যাবে না । সোহেল তাই করেছে । আজিমপুর হয়ে নিউমার্কেট-নীলক্ষেতের মোড়ে এসেছে । পিছনে তাকিয়ে দেখে সাহেবের গাড়ি । মুন্না ড্রাইভ করছে । সাহেব --সোহেল দাঁড়াও সোহেল দাঁড়াও বলে চিৎকার করছে । উর্ধব শ্বাসে দৌড়াচ্ছে সোহেল । রাত এগারটা । কে যেন তাকে বলছে ,সোহেল দৌড়াও,দৌড়াও । সোহেল দৌড়াচ্ছে । পিছনে সাহেবের চিৎকার । গাড়ির হর্ণ । মাতাল মুন্না । মাতাল সাহেব । মা---ম-আআআ বলে একটা আর্তনাদ নীলক্ষেত-নিউমার্কেটের ঘুমন্ত নিস্তব্ধ এলাকাটাকে কাঁপিয়ে দিল ।
সোহেল ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে । মুন্নার গাড়তে চাপা পড়ে মাথাটা থেতলে গেছে । গ্রাম থেকে মা এসেছে । সোহেল বিরবির করে গুনছে-শণি,রবি সোম--।মা সোহেলের মুখে মুখ লাগিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠল । সোহেল রে আমার বাপ । মোবারক ,ময়না,কালু সবাই এসেছে । সোহেল মায়ের হাতে হাত রাখল ,চোখ দিয়ে পানির পরিবর্তে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে । ডাক্তার বললেন,আর বুদ্ধি নাই । কোরবানীর আগে নিজেকে কোরবানী করে দিল ,সোহেল,মাকে বিরবির করে বলল,মা কুরবানীর গোস্ত রান্না করে এনেছ। নিস্তব্ধ হয়ে গেল,এ বোবা পৃথিবী ।
--সোহেল । বাড়ির মালিকের বড় ছেলে মুন্না । বিলেত ফেরত । সোহেল ডাক দেয় । সোহেল এ বাড়ির চাকর । খুব অনুগত । বছরে দু'বার বাড়ি যায় । দুই ঈদে । বাড়ির মালেকীন বলেছে আর কয়েকদিন পরেই ঈদ । আইতাছি স্যার,বলেই সে আবার গুণতে শুরু করে । রবি,শণি,শুক্র---কত তারিখে কোরবানী? সাহেব আর মেমসাহেবে বলাবলি করেছিল নয় তারিখে । ঈশ আর মাত্র নয় দিন ।
-- সোহেল,কানে কিম শুনিস ? ডাকছি কানে আসে না ,বলেই মুন্না তার কান দুটো ধরে এমন এক মোচর দিল যে,কান দুটো গরম হয়ে ভোঁ ভোঁ করতে লাগল ।
-- কানে কথা যায় না ।
-- জি স্যার,মাফ কইরা দেন ।
-- কি করছিলি হ্যা ।
-- ঈদের আর কয়দিন বাকি,হিসেব করছিলাম ।
একটা চড় দিয়ে মুন্না বলে,
-- যা আমার শার্ট আর জুতো নিয়ে আয় । সোহেল দাঁড়িয়ে থাকে । এইটুকু ভুলে মাইর দিতে হবে ?
-- এই বেটা কথা কানে গেছে ?
-- জি,বলে সোহেল জুতো আর শার্ট আনতে যায় ।
-- তাড়াতাড়ি নিয়ে আয় । মুন্না হাত ঘড়িতে সময় দেখে চমকে ওঠে । সময় এক্কেবারে নেই ।
ইসরে ! বাসার এক একটা চাকর যেন মন্ত্রীপুত্র যেন । আবার হাঁক দেয় ।
-- সোহেল,
তড়িঘড়ি করে জুতো আনতে গিয়ে সোহেল,সিড়িতে পড়ে গিয়েছে । হাঁটুর চামড়া ওঠে গেছে । ক্ষত স্থান থেকে দর দর করে রক্ত ঝরে পড়ছে ।
মুন্না জুতো জোড়া পায়ে দিয়ে হন হন করে বাইরে বেড়িয়ে গেল ।
সোহেল আবার ভাবতে বসল । কতদিন । নয় দিন । বাড়ি যাওয়ার জন্য মনটা কেমন ছটপট করছে ।আবার গুণতে থাকে । শণি ,রবি,সোম ----
কবে যে কোরবানী আসবে । এবার বাড়ি গেলে অনেক মজা হবে । মায়ের রান্না ! খুব মজা । এ বাড়িতে বড় বড় মাছ আনে । সোহেল কুটে । ধুয়ে দেয় ।
রাঁধুনি খালা রেধে দেয় । সোহেলের ভাগে পড়ে কাটা-কুটো । মা হলে কি এমনে খাওয়াত । সব তরকারী পাতে তুলে দিত । কাঁটা-কুটে দিত । খাইয়ে দিত । এবাড়ির মানুষ গুলো অদ্ভুত । সাহেবের ছোট মেয়েটা পুতুলের মতো সুন্দরী । খুব ভালো লাগে তার । ব্যবহার একদম ভালো না । সময়ে-অসময়ে খালি খালি মারে ।
-- আপা আমারে মারেন ক্যান ?
-- ইচ্ছা হয় তাই মারি ।
-- আপনার ইচ্ছাটারে বদল করা যায় না ।
-- যায় ।
-- তয় করেন না ক্যান ?
-- এই যে করলাম,বলেই টাস করে একটা চড় মারে সোহেলের গালে। সাথে ফকিরের বাচ্চা বলে একটা বিশ্রি গালি ।
এই ঢাকা শহরে সোহেলের মতো অনেকে চাকরের কাজ করে । করিম,কালু,ময়না,মোবারক সহ আরো অনেকে । বাজার করতে গেলে কথা হয় । বাড়ির মালিকেরা বড় নিষ্ঠুর । হাত-পা বেঁধে মার দেয় । শরীরে গরম পানি ঢেলে দেয় । গরম খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দেয় । অপমান করে । ময়না বলে,
-- আমাদের বাড়ির মালিক খুব ভালো। খালাম্মার বয়স কম । আমাকে খুব আদর করে । বলেন আমাদেরকে এক হতে হবে ।
-- তাই নাকি ,কালু বলে ।
-- হ্যারে কালু । খালা আম্মা বলে যারা মার খায়,তারা বোকা আর কাপুরুষ।
-- মার না খেলে কি খামু ? সোহেল বলে ।
-- আরে না,এর প্রতিবাদ করতে হবে । পত্রিকার হেড লাইনের খবর পালটে যাবে । বাড়ির চাকরকে অত্যাচার করতে গিয়ে এলাকার সকল চাকর-চাকরানীর হাতে মার খেয়েছে বাড়ির মালিক । সোহেলের মনে হয় সে এই দলের নেতা । এ সব অন্যায় সে মানবে না । এবার কুরবানীতে বাড়ি গেলে,যখন ফিরে আসবে তখন একটা মিটিং ডাকবে । মায়ের কথা মনে হলে মন খারাপ হয়ে যায় । খালি মাকে দেখতে মন চায় । স্বপ্নেও মাকে দেখে ।
রাতের বেলা । মুন্না বাসায় এসে দরজা ধাক্কাতে থাকে । সোহেল দরজা খোলে দেয়।
-- এই চাকরের বাচ্চা দরজা খুলতে দেরি হল কেন ?
-- ভাই জান ,বিনা দোষে গালি দিবেন না ,আমি তো দেরি করি নাই ।
একটা চড় বসিয়ে দেয় সোহেলের গালে ।
-- মুখে মুখে তর্ক , ছোট লোকের বাচ্চা ।
চোখে সর্ষের ফুল দেখে চাকর ছেলেটি । একটু পড়ে সাহেব,সাহেবের মেয়ে,আর মেমসাহেব বাসায় ঢোকেন । ছোট মেয়েটির হাতে সোনার মেডেল। সাহেবের গলায় ফুলের মালা ।সাহেব ও মুন্না মদ খেয়েছে । সোহেলের বমি আসে মদের বিকট গন্ধে । ডায়নিং রুমে বসে তারা গল্প করছে । সাহেব বললেন,
-- আমাদের মুন্নার বক্তব্য খুব ভালো হয়েছে,
-- আর,আমার মেয়ের গান--সব শিশুকে দিতে হবে বাঁচার অধিকার । বললেন,মালেকীন ।
-- শুধু তোমার মেয়ে । বলে হেসে উঠল সাহেব । আচ্ছা ,সোহেল কৈ । তাকে ডাক । আগামী কাল টি,ভি চ্যানেলের লোক আসবে । কি কি বলতে হবে ? সোহেল কে শিখিয়ে দিই । ডাক তাকে । সোহেল,এই সোহেল।
-- জি সাহেব,আসছি ।
-- আজকে টি,ভি দেখতে বলেছিলাম,দেখেছ ?
-- জি সাহেব,আপামনি গান গাচ্ছিল-সব শিশুকে দিতে হবে বাঁচার অধিকার।
-- আর কিছু দেখনি ।
-- জি সাহেব,আপনি ,খালাম্মা,মুন্নাভাই অনেক কথা কইছেন ।
-- তাহলে শোনো,আগামীকাল টি,ভি চ্যানেলের লোক আসবে,
-- জি ।
-- তুমি তাদের সামনে সাক্ষাতকার দিবে,বলবে আমরা খুব ভালো মানুষ ।
-- মুন্না ভাই,হেথে যে খালি খালি মারে আর বকে ।
-- বলবে মুন্না ভাই খুব ভালো । তোমাকে আদর করে ।
-- হ আদর করে না ছাই । অখনেই একটা চড় দিছে । আর আপামনি ।
-- বলবে সে তোমার বান্ধবীর মতো ।
-- ওরে আল্লাহ এতবড় মিথ্যে কথা । আমি বলতে পারমুনা । সাহেব ধমক দেয় । না বললে তুমি আগামি পরশু বাড়ি যেতে পারবে না ।
একথা শোনে সোহেল ,ধীরে সে জায়গা ত্যগ করে । তারমন ছটপট করতে থাকে । এবাড়ি ছেড়ে পালাতে হবে । না হলে এরা তাকে আর বাড়ি যেতে দিবে না । কাপড়-চোপর পোটলা বাঁধে । সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে । রাতের আঁধারে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায় সে । কুরবানীর দিন বাড়ি যাবে । মায়ের সাথে দেখা হবে । সোহেল কে কোথাও না পেয়ে সাহেব ও সাহেবের ছেলে খুজতে বের হয়েছে । চেনা পথে ছাড়া অচেনা পথে সে যাবে না । সোহেল তাই করেছে । আজিমপুর হয়ে নিউমার্কেট-নীলক্ষেতের মোড়ে এসেছে । পিছনে তাকিয়ে দেখে সাহেবের গাড়ি । মুন্না ড্রাইভ করছে । সাহেব --সোহেল দাঁড়াও সোহেল দাঁড়াও বলে চিৎকার করছে । উর্ধব শ্বাসে দৌড়াচ্ছে সোহেল । রাত এগারটা । কে যেন তাকে বলছে ,সোহেল দৌড়াও,দৌড়াও । সোহেল দৌড়াচ্ছে । পিছনে সাহেবের চিৎকার । গাড়ির হর্ণ । মাতাল মুন্না । মাতাল সাহেব । মা---ম-আআআ বলে একটা আর্তনাদ নীলক্ষেত-নিউমার্কেটের ঘুমন্ত নিস্তব্ধ এলাকাটাকে কাঁপিয়ে দিল ।
সোহেল ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে । মুন্নার গাড়তে চাপা পড়ে মাথাটা থেতলে গেছে । গ্রাম থেকে মা এসেছে । সোহেল বিরবির করে গুনছে-শণি,রবি সোম--।মা সোহেলের মুখে মুখ লাগিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠল । সোহেল রে আমার বাপ । মোবারক ,ময়না,কালু সবাই এসেছে । সোহেল মায়ের হাতে হাত রাখল ,চোখ দিয়ে পানির পরিবর্তে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে । ডাক্তার বললেন,আর বুদ্ধি নাই । কোরবানীর আগে নিজেকে কোরবানী করে দিল ,সোহেল,মাকে বিরবির করে বলল,মা কুরবানীর গোস্ত রান্না করে এনেছ। নিস্তব্ধ হয়ে গেল,এ বোবা পৃথিবী ।
Comments
Post a Comment