ছোটগল্প- ফুলি'র ভাবনা ||মাসিক বজ্র || ৭ম সংখ্যা || এপ্রিল- ২০১৯
ফুলি'র ভাবনা
-জাহিদ হাসান রানা
রুপকথা নামক গ্রামে জন্ম হয় ফুলির। সে দশম শ্রেনির বিজ্ঞান বিভাগের একজন মেধাবী ছাত্রী। বাড়িতে যেমন তাকে সবাই ভালবাসে তেমনি বিদ্যালয়েও শিক্ষক থেকে শুরু করে কর্মচারী পর্যন্ত সবাই তাকে ভালবাসতো। এর মধ্যে কেউ থাকতেই পারে যে, তাকে অপছন্দ করতো। ফুলিকে সবার ভালবাসার কারণ হলো সে যেমন মেধাবী তেমনি নম্র-ভদ্র। বড়দের সবসময় সম্মান করতো। তাকে ভালোবাসার আরও একটি বিশেষ কারণ হচ্ছে সে ভাবুক প্রকৃতির মেয়ে। সে সময় পেলেই ভাবতে শুরু করে দেয়। ফুলি কখনো ভাবে মানুৃষ, গাছ-পালা,পশু-পাখি,কখনোবা বিজ্ঞানের আবিষ্কার নিয়ে। মজার বিষয় হচ্ছে তার নামটিও ভাবনার বিষয় থেকে বাদ পড়েনি। একদিন, তার মা রান্না করছিলো। ফুলি গিয়ে তার মাকে জিজ্ঞাস করলো, "আচ্ছা মা, আমার নামটি ফুলি কে রেখেছিলো?" তার মা বললেন, " কেনরে পাগলি? তোর দাদি রেখেছিলেন।" ফুলি তখন থেকেই আপন মনে ভাবতে শুরু করে দিলো কেন যে দাদি আমার নামটি ফুলি রাখলেন কে জানে! যদি নামটাকে সন্ধিবিচ্ছেদ করা যায় তাহলে ফুল + ই = ফুলি। বাহ্ ফুল থেকে ফুলি। সুন্দর নাম তো! নিজের প্রসংশা করে বাইরে বসে আছে। তখনি শুনতে পেলো তাদের ছাগল ছানাটি ডাকাডাকি করছে। কি বলছে সে বুঝতে পারছে না। ভাবছে সে কি বলতে পারে? তখনি দেখলো ছাগল ছানাটির মা এসে তাকে দুধ খাওয়াতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। তখন ফুলি বুঝতে পারলো ক্ষুধার কারণে ছানাটি তার মাকে ডাকছিলো। রাতের পড়া শেষ করে খাওয়া-দাওয়া করে তার স্মার্ট ফোনটি নিয়ে গজল শুনতে লাগলো। তখনি তার ভাবনার উদয় হলো। সে ভাবতে লাগলো এতটুকু একটা মোবাইলে এতো গুলো মানুষ কিভাবে ঢুকে পড়লো! এটা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতেও পারেনি। তার অজানা রয়ে গেলো এই উত্তরটি। পরদিন যথা সময়ে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে দেখতে পেলো, একটি ছেলে গাছের ডাল ভেঙ্গে রাস্তায় ফেলে দিলো এবং চলে গেলো। ফুলি ডালটি তুলে রাস্তার একপাশে রেখেই ভাবতে লাগলো। যদি, গাছ-পালা কথা বলতে পারতো, যদি নড়া-চড়া করতে পারতো তাহলে ছেলেটিকে কিভাবে শাস্তি দিতো! ছেলেটির নামে কি তাদের পুলিশ স্টেশন এ নালিশ জানাতো? নাকি অন্যকিছু করতো? তখনি তার বান্ধবী নিলা তাকে বলল," কিরে চল, দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।" ফুলি বলল, "হুম চল।" বিদ্যালয়ে রসায়ন ক্লাসে স্যার বলছিলেন, রেফ্রিজারেট/ফ্রিজে ফল, মাংস বা অন্যকিছু রাখলে অনেকদিন ভালো থাকে। তখন ফুলি ভাবলো, কে এই ফ্রিজ তৈরি করলো? কেনই বা এতে ফল বা মাংস রাখলে পচেঁ না? এতদিন কিভাবে ভালো থাকে? সে শিক্ষককে জিজ্ঞাস করলো।
তার স্যার তখন সব উত্তর খোলসা করে দিলো। বিদ্যালয়ে ছুটির ঘন্টা বাজলে সে বাড়ি চলে আসলো। আর এভাবেই এক একটা ভাবনার শহরের মধ্য দিয়ে তার দিন চলে যেতে লাগলো।
সমাপ্ত।
Comments
Post a Comment