ছোটগল্প- অহংকারী কাক ||মাসিক বজ্র || ৭ম সংখ্যা || এপ্রিল-২০১৯
অহংকারী কাক
আহমেদ কবির
------------------------সাবা মা-বাবার সাথে শহরে বাস করে। সে শহরের একটি স্কুলে ক্লাস থ্রি তে পড়ে। দু'বছর পর ছুটিতে গ্রামে দাদু বাড়িতে গেল।
সাঁঝের পরে দাদু উঠোনে শীতল পাটি বিছিয়ে দিল। পাড়ার কচিকাঁচারা এসে জড়ো হল গল্প শুনার জন্য। চাঁদের আলোয় ঝিকমিক করছে উঠোনটা; সেই সাথে সবার মুখে ও হাসির আভা দাদুর গল্প শুনবে বলে।সাবা দাদুর কোল ঘেষে বসল গল্প শোনার অধীর আগ্রহে। দাদু বলল- তোমাদেরকে আজ এক নির্বোধ অহংকারী কাকের গল্প শুনাব।দাদু গল্প বলা শুরু করল।
একদা এক অহংকারী কাক বাস করত। সে দেখল তার পালকগুলো শুষ্ক,মলিন। কিন্তু অন্যান্য পাখিদের পালক তার চেয়ে অধিক সুন্দর। তাই সে নিজের জন্য আরও সুন্দর পালক পেতে চাইল। যতই দিন যেতে লাগল তার হিংসে বাড়তে থাকল। কিভাবে তাদের চেয়ে সুন্দর পালক তার পাখাতে লাগাবে। দিন-রাত শুধু এই ভাবনায় কাতর হয়ে উঠল। অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিল নতুন পালকের সন্ধানে বন-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াবে। অবশেষে তার সুযোগ আসল। একদিন সে একটি ঝোঁপ-জঙ্গলের উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। সে জঙ্গলে ময়ূরের অনেকগুলো পালক পড়ে থাকতে দেখল। পালকগুলো খুবই সুন্দর ছিল। সে ময়ূরের পালক পেয়ে মহা খুশি হল। ভাবল এখন আর আমায় পাই কে? খুশিতে নির্বোধ কাক তার নিজের সবগুলো পালক ছিঁড়ে ফেলল এবং ময়ূরের পালকগুলো তার নিজের মধ্যে লাগিয়ে দিল। সে তার নিজের দিকে তাকাল এবং ভাবল সে এখন ময়ূরের চেয়েও অধিক সুন্দর।এতে সে খুব সুখি ও অহংকার বোধ করল। আর মনে মনে বলল,আমি আমার গোত্রের কুৎসিত কাকগুলোর সাথে বাস করব না। আমি এখন ময়ূরের মত সুন্দর। সুতরাং ময়ূরের সাথে বাস করব। এই ভেবে ময়ূরের কাছে গেল। ময়ূরেরা তাকে আসতে দেখে অবাক হল। সে কি ধরনের পাখি তা তারা প্রথমে বুঝতে পারল না। যখন সে খুব কাছে গেল তারা দেখল যে সে ময়ূরের পালকসমৃদ্ধ একটি কাক। ময়ূরেরা খুব রাগান্বিত হল। তাই তারা তাকে আক্রমণ করল এবং তাড়িয়ে দিল। তাকে দেখতে এখন আগের চেয়ে কুৎসিত মনে হল। সে তখন পুনরায় তার দলের কাকদের সাথে বাস করতে এলো; তারাও রাগান্বিত হয়ে তাকে তাড়িয়ে দিল। কারণ তারা অহংকারী কাকটি সম্পর্কে জেনে গেল.....
দাদু আরো বললেন- তোমরা কখনো অহংকার করো না,অহংকার পতনের মূল। অহংকারী কে আল্লাহ পছন্দ করেন না। অহংকার করলে এই কাকের মত শেষ দশা হবে।
Comments
Post a Comment